লক্ষ্মীর লড়াই সাহস দেবে স্টার্টআপদের
“রোজ সকালে উঠে আয়নায় নিজের চোখে চোখ রেখে তাকানোর সাহস আমার আছে।”– কেরিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে বঞ্চনার প্রশ্নে এভাবেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা।
লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে নতুন করে আলাপ করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সকেলেই আমরা ওঁকে চিনি। রনজি হোক বা নীল জার্সির দেশাত্মবোধ কিংবা টি টোয়েন্টির ময়দান লক্ষ্মীরতন সেলিব্রিটি ক্রিকেটার। সাফল্য পেয়েছেন ভুড়ি ভুড়ি। কিন্তু মসৃণ ছিল না সেই পথ। ওঁর লড়াইয়ের কাহিনি অনেক স্টার্টআপকেই উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর এমন একজন অলরাউন্ডার যিনি বাংলার ক্রিকেটকে সম্মানিত করেছেন। দীর্ঘদিন বাংলা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলা ক্রিকেটের অন্যতম দায়িত্ববান স্তম্ভ হিসেবে থেকেছেন দীর্ঘদিন।
বিভিন্ন সময়ে পারফর্মেন্সের পরও তেমন কদর পাননি। শীলিত স্লেজিংয়ের শিকার হয়েছেন। ২২ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে কখনও ভারতের জার্সি নিয়ে, কখনও নিজের ভীষণ প্রিয় বাংলার জার্সি নিয়েও তাঁকে হোচট খেতে হয়েছে কিন্তু দমে যাননি। ক্রিকেট তো তাঁকে কখনও বিট্রে করেনি। তাই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাও তাঁর কখনও মরেনি। তিনি লড়েছেন। পড়েছেন। আবার মাথা তুলে উঠে গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছেন। লক্ষ্মী পারে।
হাওড়ার ঘুসুড়ির ভারতী সঙ্ঘ ক্লাব। শুরুটা সেখান থেকেই। রোজ ভোরবেলা ঘুম থোকে উঠে নিজের লিলুয়ার বাড়ি থেকে দৌড়ে ক্লাবে পৌঁছতেন। কষ্ট না করলে যে কেষ্ট মেলে না! বাবা-র থেকেএই শিক্ষাই পেয়েছিলেন।
১১ বছরেই ডিসট্রিক্ট। তারপর ধাপেধাপে অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯। দুটো বিভাগেই সেরা ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া। ফিরে এসে সিনিয়র বাংলা দলে সুযোগ। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। বাধ সাধল লবিইং সিস্টেম।
১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের টেস্ট দলে অভিষেক হয়। জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে ওঠে তাঁর নাম। কিন্তু এরপরও দলে রাখা হল না। এরপর একটিও ম্যাচে পরীক্ষা না করিয়েই শেষ করে দেওয়া হল টেস্ট কেরিয়ার। ওয়ান ডে-তেও একই ছবি। ৩ টি মাত্র ম্যাচ খেলেই আন্তর্জাতিক আঙিনায় দেশের জার্সি পরার সুযোগ পান। ততদিনে এই উপলব্ধি হয়ে গেছে গডফাদার না থাকলে দাঁড়ানোটা খুব শক্ত। তবুও তাঁকে টলানো যায়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিসিসিআইয়ের বর্ষসেরা হওয়া স্বত্বেও সুযোগ আসেনি।
বাংলার জার্সি গায়ে বারবার নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন। রনজি ট্রফি না জিতলেও বিজয় হাজারে, সৈয়দ মুস্তাক আলি টুর্নামেন্টে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আইপিএলেও দিল্লি, কলকাতার জার্সি গায়ে খেলেছেন বাংলার লড়াকু সৈনিক। তবে বাংলাই বা কী দিল। লক্ষ্মীরতন বাংলার ক্রিকেট মহলে সবাই ওঁকে এলআর নামেই বেশি পরিচিত, সবাই বলেন টিম-ম্যান। তাঁকেও শুনতে হয়েছে তাঁর পারফরমেন্সের অভাবেই দল হারছে। এই অভিযোগ ওঠার পর কালক্ষেপ করেননি। দুবার ভাবেননি। জায়গা আঁকড়ে পরে থাকেননি। জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন! কিন্তু দমে যাননি।
বাংলা ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পরদিনই মাঠে নামতে পেরেছেন ক্লাবের জার্সি গায়ে। এই দুর্দমনীয় ক্রিকেটার জানেন তাঁর সার্ভাইভাল প্যাকেজের নাম পারফর্মেন্স-পারফর্মেন্স আর পারফর্মেন্স।
ক্রিকেটই তাঁর ঈশ্বর। আর পরিবার তাঁর ইন্সপিরেশন। বাবা-দাদা-স্ত্রী-ছেলে এঁদের নিয়েই ছোট্ট দুনিয়ায় থাকতে ভালোবাসেন। রাজনীতির শিকার হওয়া এই খেলওয়াড়কে রাজনীতির খেলা ডাকছে। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়বেন কী করে।
ভাবছন কোচিং ক্যাম্প করবেন। ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তৈরি করবেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি তাঁর শিষ্যদের শেখাবেন নিজের জীবন থেকে শেখা মূল মন্ত্র।
“কারোর ক্ষতি কোরো না। তাহলেই রোজ সকালে উঠে নিজের দিকে তাকাতে লজ্জা হবে না।”