রেফিউজ। মধ্য কলকাতার একটি অনাথআশ্রম। এখানেই পোতা আছে সিএবি-প্রশাসনের অনতম স্তম্ভের ভীত। কীভাবে জানেন? উত্তরটা পেয়ে যাবেন যদি আপনি বিশ্বরূপ দেকে চেনেন। এই দুইয়ের মধ্যে একটা নিবিড় যোগ আছে। বাংলা ক্রিকেটের দাপুটে প্রশাসনিক সযত্নে আগলে রেখেছন রেইফউজের তিনশোর ওপর আবাসিককে। যদিও রিফিউজের চলা শুরু অনেক আগে। ১৯০১ সালে পথের অসহায় মানুষদের আশ্রয় দিতে আনন্দেমাহন বিশ্বাস শুরু করেছিলেন রেফিউজ। তারপর অনেক পথ পোরিয়েছে, অনেক লড়াই করেছে। তবে বিশ্বরূপের পরিবারও এর সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। চন্দ্রনাথ দে বিশ্বরূপের ঠাকুরদা ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের চিকিৎসক। তাঁর হাতে আসে রেফিউজের দায় দায়িত্ব এরপর বংশানুক্রমে চলছে দায়িত্ব সামলানোর কাজ। বিশ্বরূপ বাবুর বাবা হয়ে এখন রেফিউজের দায়িত্বভার বিশ্বরূপের হাতে।
কোনওরকম বিদেশি গ্রান্ট ছাড়াই এত বড় সংস্থা চালে হয়। সমস্যা তো বেশ কিছু আছেই কিন্তু রেফিউজের পজিটিভ দিকগুলোই আরও কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।কিছুটা পাবলিক ডোনেশান, কিছুটা সরকারি সাহায্য। বাকিটা নিজেদেরই যোগান দিতে হয়। এবছরও রেফিউজ থেকে ৩৪ জন ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। শুধু লেখাপড়াই নয়, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য ছেলেদের ভোকেশানাল ট্রেনিংও দেয় এই আশ্রম। আসলে সবটাই বিশ্বরূপ দে-র ভাবনা থেকেই হয়েছে। আঠারো বছর বয়স অবধি রেফিউজে থাকতে পারেন আশ্রমিকরা। তারপর তাঁদের আশ্রম ছেড়ে দিতে হয়। শুধুমাত্র মাধ্যমিক পাস করে কোনও জীবিকার সংস্থান করা রীতিমতো শক্ত, তাই এই ভোকেশানাল শিক্ষার ব্যবস্থা। বিশ্বরূপ দে-র কথায় "একটু উন্নত জীবনের সংস্থান করে দেওয়াই রেফিউজের প্রধান লক্ষ্য।” এই লক্ষ্যেই ছোট ছোট করে পা ফেলার প্রয়াস। আগে বাচ্চারা মাটিতে শুত। এখন তাদের জন্য খাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলের জন্যেই শিক্ষার সুবিধা দেওয়াও এই আশ্রমের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলির একটি। পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। শুধু এ টুকুই নয়, মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থাও করে এই অনাথ আশ্রম। মা-বাবা হীণ তরুণীরা যাতে এখান থেকে বেরিয়ে কোনও দুষ্টচক্রের হাতে না পরে তাও নিশ্চত করতে চায় রেফিউজ।
সারাদিনের অসম্ভব কর্মব্যস্ততার মধ্যে এই কাজটা দারুণ তৃপ্তি দেয় বিশ্বরূপকে। এখানে সিএবি প্রশাসনের জটিলতা নেই, নেই নিজের আইনি পেশার চাপ। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে দু ঘন্টা আশ্রমিকদের সঙ্গে কাটান বিশ্বরূপ। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। পরিচালন ব্যবস্থার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন। আসলে এই ছেলে-মেয়েগুলির পালক পিতা তো তিনিই। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির কথা শোনান না। কাজে করে দেখান। তাই যখন জিজ্ঞাসা করা হয় ভবিষ্যতে কী করতে চান। তখন বিশ্বরূপ দে-র উত্তর “যেভাবে চলছে এমনটাই যেন চালিয়ে যেতে পারি।” অনাথ ছেলেমেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন চোখে ভরে দেয় রেফিউজ। আঠারো বছরের তরুণ- তরুণীদের উড়ান ভরার দায়িত্ব নিজেদের।