শিশু পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে টগোরীদের ‘বঙ্গভূমি’

শিশু পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে টগোরীদের ‘বঙ্গভূমি’

Saturday March 12, 2016,

3 min Read

রাজ্যের অতিদরিদ্র শ্রেণির শিশু, প্রসূতি ও সদ্য মায়েদের পুষ্টি এবং শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ করে দিতে ১৯৭৫ সালে দেশব্যাপী আইসিডিএস প্রকল্পের সূচনা হয়। সদ্যোজাত অপুষ্ট শিশুদের পরিচর্যা, জন্ম থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের পুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা, মায়েদের য‌ত্নের ব্যবস্থা থাকে সেখানে। তবে প্রকল্প শুরুর পর ৪০ বছর কেটে গেলেও ভারতের পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক নয়। এখনও ভারতে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪৪, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার ৯৩, আবার সদ্যোজাতদের ২৫ শতাংশ অপুষ্ট অর্থাৎ জন্মের সময় এক চতুর্থাংশ শিশুর ওজন দু‍ কেজিরও কম। গোটা ভারতের মতোই পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার ৩১। পরিসংখ্যান বলছে, এদের অনেকেরই মৃত্যু হয় অপুষ্টিজনিত কারণে।

image


এই সমস্যার মোকাবিলায় প্রশাসনিক স্তরে একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে দেশে এবং রাজ্যে। ২০১৪ সালের সেইসব পরীক্ষানিরিক্ষারই ফসল বঙ্গভূমি পৌষ্টিক পাউডার। খুব সাধারণ সহজলোভ্য সামগ্রী দিয়ে যে এতটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শিশুদের খাবার তৈরি করা যায়, সেই পথ দেখিয়েছেন টগরীরা। টগরী দলুই, এই ক্লাস্টার কমিটির ম্যানেজার। জানালেন, “প্রশাসনিক উদ্যোগে আইসিডিএস সেন্টারের সদ্যোজাত অপুষ্ট শিশুদের জন্য প্যাকেটজাত শুকনো খাবারের স্যাম্পেল দিতে বলা হয় দঃ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে। এরপর বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্যাম্পেল জমা পড়ে নিউট্রিশন বোর্ডে। সেখানে উত্তীর্ণ হয় গোসাবা সুন্দরবন এসএইচজি ক্লাস্টার কমিটির বঙ্গভূমি‍ প্রোডাক্টটি।” ওইবছর ডিসেম্বর মাস থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিং ১ ও ২, মগরাহাট ও ফলতার চোদ্দটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১৬০ জন সদস্যকে নিয়ে বঙ্গভূমি উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ের কাজ শুরু হয়।

কীভাবে তৈরি হয় এই বঙ্গভূমি

বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার যেমন গম, ছোলা, বাদাম কিনে সেটি ভেজে রোস্টার মেশিনে দেওয়া হয়। মেশানো হয় গুড়ো চিনি। এবার এই খাবারকে প্যাকেট করে বিক্রি করা হয় জেলার বিভিন্ন আইসিডিএস সেন্টারে। প্রথমে শুধুমাত্র অপুষ্ট বাচ্চা অর্থাৎ জন্মের সময় ‌যাদের ওজন দুকেজির কম, তাদের জন্য এই মিশ্রণ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। পরে এর খাদ্যগুণ আর চাহিদা দেখে ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্যও বরাত দেওয়া শুরু হয় গোসাবার ওই ক্লাস্টার কমিটিকে। বর্তমানে ২৮টি প্রকল্পে বঙ্গভূমি সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১০ টন খাবারের চাহিদা রয়েছে বলে জানান টগরী।

গোসাবায় চার বিঘে তেরো কাঠা জমির ওপর প্রতিদিন চলে এই কর্মযজ্ঞ। মোট ১৪ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়ে এই ক্লাস্টার কমিটি তৈরি। এরমধ্যে মাত্র ৩টি গোষ্ঠী ছেলেদের। বাকি সবাই মহিলা। তবে এখনও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন. অত্যাধুনিক ‌‌মেশিনের অভাবে নতুন প্রজেক্টের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হওয়া। তার ওপর ভাল মেশিন পাওয়া গেলে প্রাথমিক স্কুল, সবলা প্রকল্পে পৌষ্টিক পাউডার সরবরাহ করা ‌যেতে পারে। এছাড়া ৯০ গ্রামের একটি প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা।পাউডার তৈরিতে যা পরিশ্রম ও খরচ তাতে সামান্য লভ্যাংশ রাখতে গেলেও কিছুটা দাম বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন টগোরী। এ ব্যাপারে আবেদন জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।

পৌষ্টিক পাউডার তৈরির পাশাপাশি লঙ্কা, হলুদ গুড়ো, মুড়ি, ছোলার ছাতুও তৈরি করে বিক্রি করা হয়। টগোরীদের আশা, আর্থিক ও পরিকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাঁদের তৈরি মশলার চাহিদা আর উৎপাদন বাড়বে। সুনিশ্চিত আয়ের উৎস খুঁজে পাবেন কমিটির ১৬০ জন সদস্য।