পূর্ব ভারতে হাসির জাদু ছড়াচ্ছে ডক্টর কোঠারির অ্যাস্থেটিকা
নাটালি পোর্টম্যান, কেট হাডসন আর মাধুরী দীক্ষিতের মধ্যে কী মিল রয়েছে বলতে পারেন? উত্তরটা জানতে সিনেমা বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনপ্রিয় এই প্যালেস্তিনি, মার্কিনি আর ভারতীয় নায়িকাকে মিলিয়ে দিয়েছে তাঁদের মোহময়ী হাসি। সেই হাসিতেই মুগ্ধ আপামর ভক্তকূল। এই হাসিই যে তাঁদের সৌন্দর্যকেও পরিপূর্ণ করেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে গোপন কথাটি আর রইল না গোপনে... এই সুন্দর হাসির অধিকারী হতে পারেন আপনিও। কম খরচে। সহজ চিকিৎসায়। আর সেই পথ দেখাচ্ছে অ্যাসথেটিকা। পূর্ব ভারতে এটিই ‘কি হোল ইমপ্লান্ট ’ এর জনক।
বিদেশে দন্তচিকিৎসার বিপুল খরচ, তাই মানুষ অত্যন্ত সচেতন দাঁতের ব্যাপারে। কিন্তু ভারতে তা সহজলোভ্য হওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতাও কম। কিন্তু গত দু’দশকে মানুষের খাদ্যাভ্যাস যেভাবে বদলেছে তাতে দাঁতের সমস্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবক-যুবতীদের আর শিশুদের মধ্যে, বলছিলেন সংস্থার ডিরেক্টর ডা. কমলেশ কোঠারি। এছাড়া তামিলনাড়ু, রাজস্থানের কিছু এলাকায় জলে ফ্লুরিডের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ফ্লুরোসিস-এর সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ভোগেন মারীর সমস্যায়। এর মূল কারণ অবশ্যই দাঁতের অযত্ন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। অত্যধিক মাত্রায় চকলেট, চিপস, আইসক্রিম খাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে দাঁতের। শিশুদের ক্ষেত্রে দাঁত পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আঙুল চোষার বদঅভ্যাস বা থাম্ব সাকিং। কিন্তু বিশ্বের আধুনিকতম চিকিৎসায় এই সব সমস্যার মুহূর্তে সমাধান সম্ভব, একথা অন্তত হলফ করে বলছেন ডা. কোঠারি। কি হোল ডেন্টাল ইমপ্লান্ট বা টুথ ইন অ্যান আওয়ার টেকনোলজিতে দাঁতের সমস্যা থেকে আজীবনের মতো মুক্তি সম্ভব।
এক্ষেত্রে অ্যাসথেটিকার অন্যতম অবদান, দন্ত চিকিৎসায় থ্রি ডি প্রিন্টারের অবতারণা, এর মাধ্যমে মারীর গঠন আর নতুন দাঁতের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। এরপর তৈরি দাঁতটি ফিক্স করে দেওয়া হয় সঠিক স্থানে। আরেক যুগান্তকারী আবিষ্কার অবশ্যই কি হোল টেকনোলজি। কারণ এর আগে ব্রিজ টেকনোলজিতে পাশের দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল, কিন্তু কি হোল টেকনোলজিতে নতুন দাঁতকে আর পার্শ্ববর্তী দাঁতের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মারীর মধ্যে থাকা হাড়ের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন চিকিৎসকরা। তাই দাঁতটিকে ফিক্স করে দেওয়া যায় সহজেই। এর ফলে অস্ত্রোপচার পরবর্তী সমস্যাও দেখা দেয় না না। কারণ প্রথমে কম্পিউটারে গোটা অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরে তা রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়।এছাড়া আধুনিক যে সমস্ত প্রযুক্তির সুবিধা দিচ্ছে অ্যাস্থেটিকা তা হল, ক্যাডক্যাম টেকনোলজি- অর্থাৎ কম্পিউটার এডেড ডিজাইন কম্পিউটার এডেড ম্যানুফ্যাকচারিং। এই প্রযুক্তির দৌলতে দাঁত প্রতিস্থাপন অনেক সহজ ও স্বাভাবিক হয়েছে। ধাতবের ব্যবহার এখন অতীত হয়ে গেছে আধুনিক চিকিৎসায়। পরিবর্তে জিরকোনিয়া দিয়ে তৈরি দাঁত অনেক বেশি ন্যাচারাল লাগে। তাতে আপনার সঙ্গী বুঝতেও পারবেন না যে দাঁতটি প্রতিস্থাপিত।
ইনভিসিবল ব্রেসেস—আজকাল মানুষ খুব সৌন্দর্য সচেতন। অল্প বয়স থেকেই নিজের ভাবমূর্তি সম্পর্কে সজাগ তাঁরা। মোহময় হাসিকে কতটা মলীন করতে পারে ব্রেসেস তা জানেন সকলেই। সে কারণে ইনভিসিবল ব্রেসেস-এর অবতারণা। এটি স্বচ্ছ বা ট্রান্সপারেন্ট। ফলে দেখা যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই। শুধু খাবার সময় এটি খুলে রাখতে হয়। টুথ হোয়াইটনিং বা ব্লিচিং- অত্যাধুনিক ও দামি জুম মেশিন দিয়ে দাঁতের দাগ তোলা হয়। একবার ব্লিচ করালে বছর খানেক ঝকঝকে থাকে দাঁত। স্মাইল ডিজাইনিং – দাঁত বা মারীর গঠনের জন্য অনেক সময় দেখতে খারাপ লাগে মানুষকে। এরজন্য রুট ক্যানাল করে দাঁতে ক্যাপ বসিয়ে দেওয়া হয়। তাতে চমৎকার পরিবর্তন আসে হাসিতে, ব্যক্তিত্বে।
গামি স্মাইল- এই সমস্যারও সমাধান রয়েছে অ্যাস্থেটিকায়। ডা. কোঠারির কথায়, “ভারতীয় অভিভাবক বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের মানুষ এ ব্যাপারে স্পর্শকাতর। মেয়েদের এই সমস্যা বিয়ের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বলে তাঁরা মনে করেন। তাই তড়িঘড়ি মেয়েকে নিয়ে আসেন দন্তচিকিৎসকের কাছে। এসব ক্ষেত্রে মারীর ওপরের দিকের কিছু অংশ কেটে বাদ দিয়ে সমস্যা মেটানো সম্ভব।” এরকমই হরেক আধুনিক প্রযুক্তিতে পূর্ব ভারতে দন্তচিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে অ্যাস্থেটিকা।মাত্র সাত বছরেই অ্যাস্থেটিকার ঝুলিতে একাধিক দেশি বিদেশি পুরস্কার।সর্বশিক্ষা অভিযান ও এনএইচআরএম-এর সঙ্গে টাই আপ আচে অ্যাস্থেটিকার। বছরে ৫০০ দুস্থ শিশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন তাঁরা।
তবে গালভরা, দাঁত ভাঙা প্রযুক্তির নাম শুনে যেন ভাববেন না পকেট খালি হয়ে যাবে। ডা. কোঠারির কথায়, আগে এই চিকিৎসা সত্যিই ব্যয়সাধ্য ছিল। কিন্তু এখন তা মধ্যবিত্তের হাতের মুঠোয়। ‘ কি হোল ইমপ্লান্ট’ টেকনোলজিতে একটি দাঁত প্রতিস্থাপনের খরচ ১৬ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সমস্যার তারতম্যের ভিত্তিতে স্মাইল ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত খরচ হতে পারে।এছাড়াও অ্যাস্থেটিকার এলিট কার্ড ফেসিলিটি রয়েছে। মাত্র দেড় হাজার টাকা দিয়ে এই কার্ড করালে সমস্ত রকম চিকিৎসায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মিলতে পারে। ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন সিনিয়র সিটিজেনরা। তবে আর দেরি কেন ? প্রাণ খুলে খান, মন খুলে হাসুন।