স্মিতা, জেনিফারের Orange Saco তৃপ্তির কাহিনি
সাজের সঙ্গে ক্লাচের দারুণ সম্পর্ক। একে অপরে পরিপূরক। ভালো ক্লাচের খোঁজ যারা রাখেন তাদের জানা আছে নামটা। অরেঞ্জ সাকো। নানা ডিজাইনের রকমারি ক্লাচ। বেশিরভাগই স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি। ডিজাইনও তাঁদেরই। প্রত্যেকটা জিনিস জোগাড় করা থেকে একেবারে ফাইনাল প্রোডাক্ট, সবের অংশ এই শিল্পীরাই। এই সংস্থাই, সেই সুযোগ করে দিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের অবহেলিত কুটির শিল্পের কারিগরদের। আর এর পেছনে আছেন দুই মহিলা উদ্যোক্তা। জেনিফার দত্ত এবং স্মিতা গুহ। কর্পোরেট সংস্থার নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করার কথা অনেকেই ভেবেছেন। এরকমই একটি কাহিনি জেনিফার আর স্মিতার। ওরা দুজনে মিলে খুলে ফেলেছেন এই স্টার্টআপ।
একদিন চাকরি আর পোষালো না। দুজনেই ভাবছিলেন ব্যবসা করবেন। যোগাযোগটা হয়েছিল অদ্ভুতভাবে। জেনিফার আর তার স্বামী সম্রাট তখন সবে বিদেশে থেকে ফিরেছে। স্মিতা আর শমিত (স্মিতার স্বামী) হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। শমিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল জেনিফারের। একদিন গল্প করতে করতেই জেনিফার শমিতকে বলেন ব্যবসা করতে চান। স্মিতার ইচ্ছের কথাটাও শমিতের জানা ছিল। দুজনের মধ্যে সেতুর কাজটা করে দিলেন শমিত। দুজনেই চেয়েছিলেন রুচিশীল কিছু করতে। ২০০৯ সালে দুই বান্ধবী মিলে গড়ে ফেললেন ‘আমি’’, দুই উদ্যোক্তার একসঙ্গে পথ চলা শুরু হল ব্র্যান্ড ‘আমি’ দিয়েই। ফরাসিতে আমি মানে ‘বন্ধু’।
জেনিফার জয়পুরের মেয়ে। স্মিতা কলকাতার। জেনিফার এবং স্মিতা দুজনেই হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন। জেনিফার এমবিএ করেছেন, মার্কেটিংয়ে দক্ষ। আর স্মিতা হাউসকিপিংয়ে। এখান থেকেই গল্পটা শুরু। দুজনেই রুচির প্রশ্নে আপোষ করেন না। দুজনেই সৌন্দর্য এবং পরিপাটিতে বিশ্বাস করেন। যখন ওরা ব্যবসাটা করতে চাইছিলেন, তখন থেকেই এই দুটো বিষয়ের ওপর নজর দেন। সৌভাগ্যবশত রাজস্থানের শিল্পীদের পেয়ে যান। জেনিফার নিজে রাজস্থানের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। এবং নিখুঁত শৈল্পিক সৌন্দর্যের পূজারী এই দুই মহিলা খুঁজে পান অসামান্য শিল্পীদের। আর এটাই ওদের ব্যবসাকে সাফল্যের স্বাদ দেয়। শিল্পীদের কাছ থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এমনকি সিঙ্গাপুরেরে নানান স্টোরে সাপ্লাই দেওয়াটাই ছিল ওদের প্রাথমিক কাজ। বিদেশেও এইসব জিনিস নিয়ে পৌঁছে যেতেন। প্রচুর ঘুরে বেড়াতে হত। ‘আমি’ ছিল শুরু, আরও একটু সৃজনশীল হতে চেয়েছিলেন ওরা। এখান থেকেই ‘অরেঞ্জ সাকো’র ভাবনা শুরু। ওরা চেয়েছিলেন সব ওদের মনোমতো নিজেদের ঘরেই তৈরি হোক। আরও নিখুঁত হোক। গত বছর নভেম্বর থেকে সিরিয়াসলি এটার ওপর কাজ শুরু করেন, বলেন স্মিতা। স্থির করেন ক্লাচ বানাবেন। ততদিনে বাজার ঘুরে দেখা হয়ে গেছে ঠিক কোন জিনিসটির অভাব আছে। এক একটা ক্লাচ এক একটা গল্প বলছে। তার জন্য ফিরে যান শিল্পের মূলে, গ্রাম বাংলার কুটিরশিল্পের কারিগরদের কাছে। ওদের ঢাকাই কালেকশনের ক্লাচে পাবেন বাংলার কৃষ্টির ছোঁয়া।
‘অরেঞ্জ সাকো’র মেনুফেকচারিং ইউনিট হয়েছে কলকাতায়। আসল সংস্থার নাম ম্যাজিক ট্রাঙ্ক। ‘আমি’কেও একই সংস্থার অধীনে নিয়ে আসতে চান দুই বন্ধু। জেনিফার বলেন, যারা একটু অন্য রকম ভাবতে চান তাদের জন্য ‘অরেঞ্জ সাকো’। একজন কলকাতায় অন্যজন জয়পুরে। স্কাইপিতে কথা চলতেই থাকে।
সবে এপ্রিলে পথচলা শুরু হয়েছে। কলকাতার নানা জায়গায় ১৫টি আউট লেট রয়েছে। ‘বুনোসিলো’, ‘একরু’, ‘শস্যজ’ এবং ‘সিমায়া’য় পাওয়া যাচ্ছে অরেঞ্জ সাকোর ক্লাচ। তাছাড়া, পুনে, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বাইয়ের ‘তাজ খাজানা’, দিল্লি, গোয়া, হায়দরাবাদ বাদ নেই নেই কোনও শহরই। মুম্বাই এয়ারপোর্টেও পেয়ে যাবেন ওদের।