অম্বিকা শর্মার প্রথম পছন্দই চ্যালেঞ্জ
বিন্দু থেকে সিন্ধুদর্শনের পথটা খুব সহজে পেরোননি তিনি। বরং দুর্গম পথ পেরিয়েই সাফল্য এসেছে। এই দীর্ঘ পথে যাই তাঁর পছন্দ হয়েছে, তাঁকেই সঙ্গী করেছেন। তিনি অম্বিকা শর্মা। এই মুহূর্তে দেশের তরুণী উদ্যোগপতিদের তালিকায় পাকাপাকিভাবে নাম তুলে ফেলেছেন অম্বিকা।
ছোট থেকেই ঘুড়ে বেড়ানোর শখ অম্বিকার। স্কুলে পড়ার সময়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাহাড় তাঁকে টানত। প্রকৃতির সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কখনও হিমালয়ান রেঞ্জ, আবার কখনও আরাবল্লি পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন। সাঁতার কেটেছেন এদেশের ছোট বড় প্রায় সবকটি নদীতে। এভাবেই বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে এই তরুণী আজ উদ্যোগপতি। তবে, তাঁর বৈচিত্রময় জীবনটা আজও বদলায়নি। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও নতুন নতুন জায়গায় সন্ধানে আজও ঘুরে বেড়ান এই তরুণী। আলাপ জমান নানাভাষী মানুষের সঙ্গে।
দেশকে জানার পাশাপাশি অম্বিকার শখের তালিকাটিও বিশাল। কোনও গরমের ছুটিতে অম্বিকা যদি ব্যস্ত থাকেন কাঠের কারুকাজ শিখতে, তো পরের ছুটিতে হয়ত তাঁকে দেখা যাবে ছবি আঁকতে। নতুনকে জানা এবং শেখার প্রতি অম্বিকার এই আকর্ষণই আজ তাঁর সাফল্যের রহস্য। নতুন কিছু শেখার অগ্রহেই স্কুলের গণ্ডি পরেনোর পর একটি কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি ফার্মে শিক্ষনবিশ কাজে যোগ দেন অম্বিকা। পরে যা তাঁর সারাজীবনের ভালবাসায় পরিণত হয়।
সেই ভালবাসাকে পাথেয় করেই অম্বিকার নিজের সংস্থা পাল্প স্ট্যাটেজি কমিউনিকেশনের পথ চলা শুরু। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও সরাসরি কাজ করে থাকে এই সংস্থা।
প্রথম থেকেই নিজের উদ্ভাবনী শক্তি, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, গ্রাহকদের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার জেরে পাল্প স্ট্র্যাটেজি কমিউনিকেশন সকলের আস্থার জায়গা হয়ে ওঠে। তবে যুদ্ধ জয় খুব একটা সহজ ছিল না। সংস্থার কর্ণধার অম্বিকার কথায় অন্যান্য ক্ষেত্রের মত ব্র্যান্ড মার্কেটিং-এর বাজারে চরম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁর সংস্থাকেও। তবে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে এই লড়াই সবসময়ই উপভোগ করেছেন এই সাহসী মেয়ে। কর্মক্ষেত্র থেকে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষা নিয়ে ঠিক করেন পরবর্তী লক্ষ্য।
ইতিমধ্যে মাত্র তিন বছরেই সংস্থার ঝুলিতে রয়েছে পঞ্চাশটিরও বেশি পুরস্কার। রয়েছে এমএএ গ্লোবের মত সম্মানও। ২০১৩-১৪ সালে সংস্থার আর্থিক লাভের পরিমাণ ছিল তার আগের বারের তুলনায় ১৬৮ গুন বেশি। কর্মীদের ভাল কাজ করার খিদেই এই সাফল্যের কারণ বলে মনে করেন অম্বিকা। সেজন্য কর্মীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতাও দেন তিনি।
অম্বিকার বাইক বাহন
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে পাল্প স্ট্র্যাটেজি কমিউনিকেশনের মালকিন জানান, বাইক চালাতে চালাতে বেশিরভাগ সময়ই নতুন আইডিয়া খেলে যায় তাঁর মগজে। নিজেকে রিফ্রেশ করতে তাই সপ্তাহান্তে একবার অন্তত বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাঁর গ্যারাজে রয়েছে সুজুকি জিএসএক্স – আর ১০০০ ও হার্লে ডেভিডসন রোড কিং-এর মত বাইক। এভাবেই গত জানুয়ারিতে নিজের হার্লে ডেভিডসন করে দিল্লি থেকে কন্যাকুমারিকা পাড়ি দিয়েছিলেন এই ডাকাবুকো মেয়ে।
এত বড় মাপের সাফল্যের মধ্যেও কিছুটা খেদ রয়েছে সফল এই তরুণীর। তিনি জানাচ্ছেন, শুধু ভারত নয় সারা বিশ্বেই মহিলা উদ্যোগপতির সংখ্যা নগন্য। বিষয়টি ভাবায় তাঁকে। ভবিষ্যেতে যারা নতুন কিছু করার চ্যালেঞ্জ নিতে চান তাঁদের প্রতি অম্বিকার পরমার্শ, নিজের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাসই হল এগিয়ে যাওয়ার মূল মন্ত্র।