রাস্কারের REDX এখন রুটআলফার কলকাতায়
রমেশ রাস্কারের হাত ধরে আলোর গতিবেগের ছবি তুলতে শিখেছে দুনিয়া। ফেমটো ফটোগ্রাফিই বলুন কিংবা ক্যামেরা, লেন্স, শাটার স্পিড নিয়ে তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষা গবেষণা আর উদ্ভাবন, গোটা দুনিয়াকে রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এই ভারতীয় প্রফেসর, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অঙিনায় আরও বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছেন। ২০১৬ সালে তিনি যখন লেমেলসন এমআইটি পুরস্কার পেলেন তখনই ঘোষণা করেন তাঁর ইচ্ছের কথা। গোটা দুনিয়ায় উদ্ভাবন নিয়ে অগ্রণী যুবক যুবতীদের প্রেরণা যোগাতে চান তিনি। জাগিয়ে তুলবেন তাঁদের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা উদ্যোগপতিকেও। আর সেই লক্ষ্যেই তৈরি করেছেন তাঁর স্বপ্নের সংস্থা REDX, এটি একটি অ্যাব্রেভিয়েশন। তার পরিকল্পনার রুটম্যাপও বলতে পারেন। R: Rethinking, E: Engineering, D: Design, এবং X: eXecution এই চারটি দিশার একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চান। পুরস্কারের সমস্ত অর্থ শুধু এই কাজে দান করে দিয়েছেন রমেশ। বোস্টন থেকে বোতসোয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলকাতা। গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর ল্যাব। ভবিষ্যতের উদ্ভাবক এবং একাধারে উদ্যোগপতি তৈরির কারখানা খুলে বসেছেন রীতিমত। কলকাতার দুই উদ্যোগপতি সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় এবং রুটআলফার কর্ণধার পরিচয় দাস দায়িত্ব পেয়েছেন কলকাতায় রেডেক্স ক্লাব চালানোর।
রমেশ বলছেন, মানুষের সেই সামর্থ্য আছে যাতে সে সমস্যার সমাধান করতে পারে। আদি অনন্ত কাল ধরে মানুষ একটু একটু করে সমস্যার সমাধান করতে করতেই এগিয়েছে। কখনও একা, কিন্তু অধিকাংশ সময় একসঙ্গে অনেকে মিলে। রেডেক্স এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে মেধাবী মানুষ আসবেন হাতে হাত লাগিয়ে উদ্ভাবন সম্পন্ন করবেন। সকলে মিলে। প্রথমত সমস্যাকে নিয়ে ভাববেন, প্রযুক্তিগত সমাধান বেরিয়ে আসবে সেই ভাবনা থেকেই তারপর কেমন হবে সেই সমাধানের রূপ সেটাও স্থির করবেন তাঁরাই। এবং সর্ব শেষ অথচ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল সেই ভাবনাকে, সমাধানকে কার্যকর করা। সেটা করতে পারলেই উদ্ভাবন সফল হবে। এই রুটম্যাপ ধরেই এযাবৎ কালের সমস্ত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ঘটেছে। আর তারই প্রভাব পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, সমাজে। রাস্কার মনে করেন, এভাবেই উদ্ভাবন দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়াটা সম্ভব হবে।
এবার আসি রুটআলফার প্রসঙ্গে। আপনারা আগেই পড়েছেন পরিচয়ের কাহিনি। প্রযুক্তি-প্রেমী মেদিনীপুরের এই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা আর গবেষক সব্যসাচী দুজনেই নতুন কিছু করার আনন্দে মেতে আছেন। সার্ভিকাল ক্যানসার প্রাথমিক স্তরে নির্ণয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধার ব্যবহার করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে সকলকে চমকে দিয়েছেন সব্যসাচী। ফেসবুক ডেভেলপার সার্কেলে কলকাতা শাখায় এদেরকে খুঁজে পাবেন। রমেশ রাস্কারের REDX -এও এরাই তৈরি করছেন ভবিষ্যতের উদ্ভাবক আর আবিষ্কারক। পরিচয় বলছিলেন, ওদের এই ক্লাবে রাস্কারের গাইডলাইনে উদ্ভাবনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তারা পাবেন রাস্কারে হাতে লেখা সার্টিফিকেট। আবিষ্কারের তাগিদ না থাকলে যে সভ্যতা এগোবে না সেটা সকলকে বোঝাচ্ছেন পরিচয় আর সব্যসাচী। ফলে মৌলিক আবিষ্কারের আগুনে ইন্ধন দিতে চায় REDX Kolkata Club, তাই বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আহ্বান জানাচ্ছেন পরিচয় সব্যসাচীরা। ডাকছেন উদ্ভাবক, গবেষক, বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সাধকদের। পাশাপাশি এই ক্লাবের দরজা খোলা টেক অন্ত্রেপ্রেনিওরদের জন্যেও। পরিচয় বলছিলেন, ভারতের গ্রামে আছে ভারতের ঘুরে দাঁড়াবার চাবিকাঠি। গ্রামের যুবক যুবতীদের ভিতরও রয়েছে উদ্ভাবন করার অসামান্য ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাকেও হাল্কা করে নিচ্ছেন না। এখন ওঁরা সেই আবিষ্কারক তৈরির ব্রত নিয়েছেন। পরিচয় নিজেও ছোটবেলা থেকেই নানান উদ্যোগে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। এবার রুটআলফার ঠিকানায় রমেশ রাস্কারের REDX কলকাতা ক্লাব হতে চলেছে কলকাতার আরও একটি গর্বের হদিস।