চারপাশে তাকালেই এখন মোবাইল অ্যাপ-এর রমরমা। শপিং থেকে বিল পেমেন্ট, ট্যাক্সি বুক করা থেকে নিখাদ আড্ডা – সবকিছুর শুলুক সন্ধান রয়েছে অ্যাপের দুনিয়ায়। বলতে গেলে স্মার্টফোনের যুগে আমাদের জীবন এখন অ্যাপময়।
স্মার্ট জেনারেশনের এই অ্যাপ নির্ভরতার কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন হাজারও অ্যাপ বাজারে আসে। অ্যাপ নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও মারাত্মক। কিন্তু সব অ্যাপই তো আর জনপ্রিয় হয় না। অ্যাপ স্টোর থেকে অনেক চকটদার অ্যাপ ইন্সটল করলেও কিছুদিন পর অব্যবহৃত অনেক অ্যাপই আমরা আনইন্সটল করে দিই। পরিসংখ্যান বলছে, শতকরা ২২% অ্যাপ একবারের বেশি ব্যবহার হয় না। তা হলে অ্যাপ-এর বাজারে টিকে থাকার রহস্য কী !
সফল পেশাদাররা বলে থাকেন “get your basics right”, অর্থাৎ গোড়ার ব্যাপারগুলো ঠিক রাখা, যে কোনও ক্ষেত্রে উৎকর্যের এটাই প্রাথমিক শর্ত। অ্যাপের বাজারে সাফল্যও এই নিয়মের বাইরে নয়। আর তাই আপনার তৈরি অ্যাপটি ইউজাররা কতটা গ্রহণ করছে, নিয়মিত সেই পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Everest নামে একটি বেশ জনপ্রিয় অ্যাপের বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার গল্প জেনে অনেকেই শিক্ষা নিতে পারেন। The Rise and Fall of Everest (The App) নামের একটি লেখায় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অ্যাপটির ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। পরিসংখ্যানকে অবহেলা করাকেই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ওই অ্যাপ নির্মাতা।
এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করেই Styl নামক একটি অ্যাপ বেঙ্গালুরুতে রমরম করে চলছে। ওই অ্যাপ নির্মাতাদের তেমনটাই দাবি। বেঙ্গালুরুর যেকোনও সালঁ-তে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া থেকে নিজের জন্য সেরা ট্রেন্ডিং স্টাইলটি বেছে নেওয়া এবং সবশেষে সালঁ-র বিল পেমেন্ট – এই সবকিছু করা যায় Styl অ্যাপটির মহিমায়।
গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দের বিশ্লেষণ করে অ্যাপটির নির্মাতারা টের পেয়েছেন, নতুন ইউজার পাওযার থেকেও সেই ইউজারকে ধরে রাখাটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ জয় করতে Styl –এর নির্মাতারা নিত্যনতুন উপায় বের করছেন।
অ্যাপটি ডাউনলোড করার আট ঘণ্টার ভিতর ইউজারের কাছে এমনই একটি ওয়েলকাম ই-মেল পাঠানো হয়। সেই মেলে অ্যাপের গুনাগুন ব্যাখ্যার পাশাপাশি একশো টাকার একটি ডিস্কাউন্ট কুপনও দেওযা হয়।
আগে শুধুই প্রথমবার ব্যবহার যোগ্য কুপন দেওযা হত, এখন সেই কুপনটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের বিকল্পও যোগ করা হয়েছে।
ছোট্ট এই কৌশলগত বদলেই ক্লিক-থ্রু-রেট বা CTR (একটি নির্দিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক করার হিসেব) ২% থেকে ৫.৫১% তে বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরাই কুপনটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাদের মধ্যে অ্যাপটি আনইন্সটল করার প্রবণতা কম।
Styl –এর নির্মাতারা গবেষণা করে দেখেছেন, গড়ে ২৩ দিন অন্তর একজন সালঁ-তে যান। তাই ২৩ দিনের মাথায় প্রত্যেক অ্যাপ ব্যবহারকারীকে নোটিফিকেশন দিয়ে মনে করিয়ে দেওয়া হয় – স্যালঁয় যাওয়ার সময় হয়েছে। ৩৪% ইউজার এই নোটিফিকেশনে ক্লিক করেন। আবার তাদের মধ্যে ৪৬% ই ফের Styl অ্যাপটি ব্যবহার করেন। তা ছাড়া পরিষেবা ব্যবহারের পর গ্রাহকদের কাছে ফিডব্যাকও চাওযা হয়।
তবে এক্ষেত্রে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জনের কাছ থেকেই ফিডব্যাক পাওয়া যায়। Styl –এর নির্মাতাদের দাবি তাঁদের গ্রাহকদের মধ্যে অ্যাপটি আনইন্সটল করার প্রবণতা ৩৮% এরও কম। তবুও যাঁরা সেই পথে হাঁটেন, তাদের কাছেই এমনই একটি মেল পাঠানো হয়। জানতে চাওযা হয়, আনইস্টল করার নির্দিষ্ট কারণ, কীভাবেই বা অ্যাপটির পরিষেবা আরও ভালো করা যায়।
প্রাপকদের ৮১% ই মেলটি খুলে দেখেন। পরিষেবা উন্নত করার পরামর্শও দেন অনেকে।
কথায় বলে “customers are god”- ক্রেতা ভগবান। তাই শুধু কর্ম করলেই হবে না, ফল লাভ করতে চাইলে সেই ভগবানকেও তুষ্ট রাখতেই হবে।