অবসাদ, ধূমপান, ফোবিয়ার চিকিৎসায় NLP
বিশ্বজুড়ে কয়েক লক্ষ ভাষা। কিন্তু মনের ভাষা কী? সম্ভবত এটিই এমন একটি ভাষা যা আক্ষরিক অর্থেই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বিভিন্ন বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া, অভিব্যক্তি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব মনের সেই ভাষার পরিচায়ক। বিষয়টা কি একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে ? তাহলে একটু সহজ করেই বোঝানো যাক।
ধরুন কোনও একটি তথ্যচিত্র সম্পর্কে আপনার তিন বন্ধুর মতামত নেওয়া হল। তাতে একজন বললেন ছবিটি ভিসুয়ালি খুব ভাল, কেউ বললেন ছবির সংলাপ বেশ আকর্ষণীয়, আবার কেউ বললেন, ছবির বার্তাটি ভীষণ স্পর্শকাতর। এর অর্থ আপনার তিন বন্ধুর মধ্যে কারো দর্শনেন্দ্রিয় খুব শক্তিশালী, কারো শ্রবণেন্দ্রিয়, আবার কারও অনুভূতি অন্য সব ইন্দ্রিয়কে ছাপিয়ে গেছে। কাজেই এদের শক্তিশালী ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে যদি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয় বা তারা নিজেরাই সেটা চেষ্টা করে তবে সহজেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। ওষুধপথ্য ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির এই থেরাপিকে বলে এনএলপি বা নিউরো লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রামিং। সম্প্রতি হায়দরাবাদের কিস্টোন ট্রেনিং সার্কল আর কলকাতার গ্রিপ কনসালটিংয়ের সৌজন্যে অভিনব ছয়রদিনের ওয়ার্কশপ হয়ে গেল শহরে। থেরাপিস্টদের চ্যালেঞ্জ, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেই তাঁর দুর্বলতাকে জয় করতে পারেন। যেমন ধরুন, পারিবারিক এক দুর্ঘটনার পর থেকেই আপনার তোতলানোর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সামান্য টেনশনেই আপনি তুতলে যান। তাতে চাকরির ইন্টারভিউতেও বারবার অকৃতকার্য হচ্ছেন, সমস্যা মেটাবে এনএলপি থেরাপি। এর মাধ্যেম আপনার তোতলানোর সমস্যাকে আপনি নিজেই জয় করতে পারবেন। এভাবেই ধূমপানের সমস্যা, বদ অভ্যাস, যে কোনওরকম ভয় বা ফোবিয়া দূর হতে পারে।
আবার ধরুন, এই আর্থিক বর্ষে আপনার ইনক্রিমেন্ট তেমন হয়নি। সহজাত প্রক্রিয়ায় এরজন্য আমরা দায়ী করে থাকি আমাদের বস, সহকর্মী কিংবা ভাগ্যকে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বদল হয় না। এতসব দোষারোপের পরও প্রাপ্তির ঝুলি কিন্তু শূন্যই থেকে যায়। তখন কাজে আসে রাপো বিল্ডিং থেরাপি। কিংবা কেউ প্রচণ্ড ধূমপান করেন। খাবার পরে, মদের আসরে সিগারেট না হলে যেন চলেই না। কিন্তু কেন ?এই কেন-র উত্তরটাই খোঁজে এনএলপি। এর মাধ্যমে কোনও ই-সিগার ছাড়া নিজেই নিজেকে প্রভাবিত করতে পারবেন ধূমপান বর্জন করতে। থেরাপির শুরুতেই বলতে হবে, আই উইল কুইট স্মোকিং। অর্থাত, মন আর শরীরের ভাষাকে উপলব্ধি করাই এনএলপির সারকথা।
এই ওয়ার্কশপের বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে এনএলপি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারীদের। তারপর মন আর শরীরের মধ্যে সংযোগস্থাপনের সূত্র দেওয়া হয়। এরপর শেখানো হয় ভাষার বিভিন্ন মডেল। যেমন- মিল্টন মডেল, মেটা মডেল, মেটাফর্স। এই মডেলের মাধ্যমে শেখানো হয় কীভাবে ভাষাকে শক্তিশালী সংযোগস্থাপনে ব্যবহার করা যায়।
এই ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলেন শহরের নামীদামি মনোবিদ, রিসার্চ স্কলার, অন্ত্রেপ্রেনিওররা। সেশনের পর মনোবিদরাও স্বীকার করলেন, ওষুধ ছাড়া এমন চিকিৎসা যে সম্ভব তা আগে জানতেন না তাঁরা। এই প্রশিক্ষণ একবার নিলে তা নিজের ওপর এবং অন্যের ওপর প্রয়োগ করতে পারবেন আপনি। গ্রিপ কনসাল্টিংয়ের কর্ণধার অভিরূপ ব্যানার্জির কথায়, দীর্ঘদিন চাকরি করার পর আমার ব্যবসায় নামার ইচ্ছা হয়। কিন্তু সেই ঝুঁকিটা নেব কিনা তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। তখনই হায়দরাবাদের কিস্টোন ইন্ডিয়ার সন্ধান পাই। এনএলপি যে কতটা কার্যকরী তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ আমি।
কলকাতায় এই কনসেপ্ট এক্কেবারে নতুন। তাই এনএলপি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের পরিসরটাও খুব বেশি ডানা মেলেনি। তাই ওয়ার্কশপের একশো শতাংশ সাফল্য নিয়ে সন্ধিগ্ধ ছিলেন অভিরূপবাবুও। যদিও, অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দেখে ফের এমন ওয়ার্কশপ আয়োজনের রসদ পেয়ে গিয়েছেন তিনি। অংশগ্রহণকারীদের আমেরিকান বোর্ড অফ এনএলপির তরফে এনএলপি প্র্যাকটিশনার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তাই এবারে যাঁরা মিস করেছেন তাঁদের জন্য অদূর ভবিষ্যতেই ফের এনএলপি ওয়ার্কশপ নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গ্রিপ কনসাল্টিংয়ের কর্ণধার।