Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
ADVERTISEMENT
Advertise with us

তোমারও, আমারও, একুশে ফেব্রুয়ারি

তোমারও, আমারও, একুশে ফেব্রুয়ারি

Wednesday February 21, 2018 , 3 min Read

এখন ঝকঝকে ফ্ল্যাটে আর দাওয়া থাকে না। দরজার সামনে ডোর ম্যাটটা ধুলো মেখে পড়ে থাকে। জানলা দিয়ে যেটুকু রোদ্দুর ঢোকে তাও দূষণ মাখা। আমের বোলের গন্ধ পেলে শহরের মানুষের ফুসফুস উসখুস করতে থাকে। একবার একটু সোনাঝরা গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে করে। 

image


আমার বাংলা, তোমারও বাংলা। রাজাকারের বেটা হও আর ভাষা শহিদের ঘরের লোক তুমি আমি সবাই এক ভাষাতেই গান গাই, কথা বলি। তুমি হিন্দু না মুসলিম কেউ প্রশ্ন করার হিম্মত করে না। তোমার ঘড়ি আধ ঘণ্টা এগিয়ে থাকলেও তুমি আমার সহোদর। বাংলা যখন আমার মাতৃভাষা, তখন তোমার ধমনীতে আমার হৃদয়ের স্রোত বয়ে যায়। সেই স্রোত নদীর আলপনা কাটে তোমার বরিশালে। আমার রানাঘাটের চুরনি, তোমার শীতলক্ষ্যার থেকে হতে পারে কম জলে ভাসে। কিন্তু তবু তুমি আমি এই বাংলার ঘোলা জলে মাছ ধরি। বাংলার জমি জিরাতের ওপর বুলিয়ে দিই লাঙলের আল। ফুটে ওঠে বাংলার নকশিকাঁথা। বাংলা আমার মাতৃভাষা। বাংলা আমার নিরাকার দেশের নাম। একুশের ধর্মনিরপেক্ষ, দেশ নিরপেক্ষ, রাজনীতি নিরপেক্ষ মঞ্চে গিয়ে দাঁড়াতে আমার হৃদয়ও সমান ব্যাকুল। তোমার পাশে দাঁড়ানোর অদম্য আবেগে আমি লাগাম পরাতে পারি না। তুমি খোপায় কৃষ্ণচূড়া পরো ছাই পলাশ দিয়ে সাজো! তোমাকেই ঘিরে চলে রক্তস্রোত আমার মন্থর। তোমার আমার হৃদয় আজ কানাকানি করে বাংলায়। তুমি হতে পারো গ্রাম আর আমি নাক উঁচু শহর। অথবা আমি অজ পাড়া গাঁ, আর তুমি দাম্ভিক ব্যস্ততা। তুমি বিন্দাস বলো। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে মাশাল্লা। তবুও বাংলাই বয়ে চলে স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে। একুশের মঞ্চে টাঙানো আদিগন্ত চরাচর যে শামিয়ানা। সেখানে দুনিয়ার সমস্ত বাঙালি এসে দাঁড়ায়। গর্বে মাথা তোলে। বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে রাষ্ট্রসংঘে দাঁড়ানো মুজিবর রহমানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মুখটা ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে জীবনানন্দ দাশের গভীর চোখ দুটো। চির বিরহী, চির অনুসন্ধিৎসু সেই মানুষটি হাজার বছর পেরিয়েও নাটোরের বনলতা সেনের চোখের দিকে চেয়ে থাকতে চেয়েছিল। চেয়েছিল ফিরে আসতে এই বাংলায়, জসীমুদ্দিনের, শামসুর রহমানের আল মাহমুদের, নির্মলেন্দু গুনের, শক্তির, সুনীলের, শঙ্খের, জয়ের, এই নদীমাতৃক দেশে। আপনি হয়তো বলবেন এসব কাব্য করে লাভ কী। বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করে কী লাভ! একটি বিজ্ঞানের বইও নেই যা ছাত্ররা উচ্চশিক্ষায় পড়তে পারেন। বাংলা ভাষায় ভূগোল, ইতিহাস, গণিত, পদার্থ বিদ্যা, জীব বিদ্যার কোনও টার্ম উচ্চশিক্ষায় কাজে লাগে না। তাহলে বাংলা ভাষায় পড়ে কী করবে এই তিনশ মিলিয়ন মানুষ। বাংলা ভাষা শিখে কী হবে প্রগতির। সে নিজেই নিজের কবর খুঁড়ে রাখছে প্রতিদিন। উচ্চশিক্ষায় বাংলাকে প্রয়োগ করতে না পারলে এগোবে যে না তা সম্যক টের পাচ্ছেন বিদ্বজ্জনেরা। বাংলা ভাষায় পত্রপত্রিকা কম নেই। সেখানে লেখালিখিও চলছে নিয়মিত। কিন্তু জ্ঞানচর্চার অঙ্গনে বাংলা ভাষায় এগোনোর পথ নেই। কারণ সর্বজন গ্রাহ্য পরিভাষা নেই। গবেষণা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এই নিয়ে কাজ হচ্ছে কই! এই শূন্যতাই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

একদিকে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে কলেজে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশুনোর পাঠ প্রায় চুকে যাওয়ার উপক্রম। ইংরেজি মাধ্যম এবং হিন্দি মাধ্যম স্কুলে বাংলা বিপন্ন ভাষা। ছাত্রছাত্রীরা নিমরাজি হয়ে পড়ে। বাঙালির ছেলে বাংলা পড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বড় হরফে খবরের কাগজের হেডলাইন যদি বা কোনও ক্রমে পড়তে পারে কিন্তু টানা লাগাতার বাংলা পড়ার অভ্যাস নেই এমন মানুষের সংখ্যা শতকরা ৩৫ শতাংশ। তাই ইংরেজি হরফে সুকুমার রায় পড়তে চাইছেন তারা। আর অন্যদিকে বাংলা ভাষায় কোডিং করছেন ইকরাম হোসেন বাংলাদেশের তরুণ প্রোগ্রামার। তৈরি করেছেন পতাকা নামের বাংলা কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ। বাংলা ভাষা নতুন মাত্রা পাচ্ছে বাংলাদেশে। পাচ্ছে নতুন মঞ্চ। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে পত্র পত্রিকা ওয়েবসাইটের মতই অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে হু হু করে ডাউনলোড হচ্ছে সেসব। দেশ কালের সীমা অতিক্রম করে বেইজিং, বার্লিন, ব্রিকস্ট্রিট থেকে বোস্টন একুশের মঞ্চ গড়ছেন সে দেশের বাঙালিরা।

সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে কোকাকোলার বিজ্ঞাপনী স্টান্টে। ভাষা দিবস উপলক্ষে হারিয়ে যাওয়া কিংবা কম ব্যবহৃত বাংলা শব্দ ছাপানো স্টিকার লাগান হয়েছে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতলের গায়ে। হাতে হাতে ঘুরছে অপরিচিত বাংলা শব্দ। একটি দুটি করে ভুলে যাওয়া শব্দ আরও একবার শিখে যাবে বাঙালি। ব্যবহৃত হতে থাকবে বাংলা ভাষায়। তাই ধন্যবাদ প্রাপ্য এই বহুজাতিকেরও।