প্রয়াতের প্রতি দুই যুবকের Shradhanjali তারিফ এ কাবিল
বিবেক আর বিমল। দুই বন্ধু। দুজনেই দীর্ঘদিন সেলস এর কাজে ছিলেন। কে জানত একদিন দুপুরের লাঞ্চব্রেক ওঁদের বাকি জীবনের চিন্তাভাবনাই শুধু নয়, গোটা জীবনশৈলীটাই উল্টেপাল্টে দেবে। সালটা ২০১৪। জুন মাস। ঝাঁ ঝাঁ রোদে পুড়ছে আমেদাবাদ। দুই বন্ধু একত্রে একটু স্ন্যাক্স খেতে গেলেন। তেলেভাজা মোড়া ঠোঙায় চোখ পড়তেই মনটা কেমন খচখচ করে ওঠে ওঁদের। মৃত্যু সংবাদের কলাম। তার উপরে গরম গরম স্ন্যাক্স। শ্রদ্ধাঞ্জলীর পৃষ্ঠায় খাবার দেওয়া কিংবা খাওয়া, দুটোই বেশ অস্বস্তিকর। ওঁরা ভাবতে শুরু করেন। আপনজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অথবা তাঁকে স্মরণ করার পদ্ধতিটি কি আরেকটু সম্মানজনক এবং সুন্দর করে তোলা যায়না?
এমন উপায় যা হবে চিরস্থায়ী এবং সেই পদ্ধতিতে আপনি আপনার আত্মীয় বিয়োগের বিরহ ভাগ করে নিতে পারবেন পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সহমর্মীর সঙ্গে। জন্ম নিল 'শ্রদ্ধাঞ্জলী'। ভারতের প্রথম অনলাইন প্রয়ান বার্তা পোর্টাল। এই স্টার্টআপের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা, তাঁদের স্মৃতির পবিত্রতা রক্ষা করা।
অটুট স্মৃতি
বিবেক সাত বছর সেলসের চাকরি করছিলেন। বরোদায় SBI এর ব্যাঙ্ক অ্যাসিওরেন্স টিমের ট্রেনার। দেশে তাঁর দল ছিল একনম্বরে। সবসময় চাইতেন বাস্তব আর ভারচুয়াল জগতের সেতুবন্ধন। সঙ্গী আর সহনির্মাতা বিমলের সেলস এ বারো বছরের অভিজ্ঞতা। কাজ করেছেন Castrol India Ltd এর সেলস ম্যানেজিং এ। Tata AIG তে ১০০ জন সফল ফিন্যালশিয়াল অ্যাডভাইজরের দল নিয়ে কাজ করার রেকর্ড আছে তাঁর।
২০১১ র সেই দুপুর যেখান থেকে আমাদের কাহিনী শুরু, তার আগে চার বছরের সহকর্মী ছিলেন ওঁরা দুজন। সেদিন দুজনে একটা সৃজনশীল আইডিয়া এবং বিশ্বাসে ভর করে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিশ্বাস মানুষের আপনজনের স্মৃতিকে অটুট রাখার, বিশ্বাস সেই স্মৃতির মর্যাদা রক্ষা করার।
কিভাবে জানাবেন শ্রদ্ধাঞ্জলী
গোটা বিষয়টি যতটা সম্ভব সহজ কিন্তু অভিনব রূপে সাজিয়েছেন বিবেকরা। একটি ইন্টাব়্যাকটিভ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁদের মৃত প্রিয়জনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারবেন। সাবস্ক্রাইব করার পর মেসেজ, ভিডিও, ফোটো সবই আপ করা যাবে। ফ্যামিলি ডিটেলস থাকবে। মানানসই সঙ্গীতের সুরে তাঁরা তাঁদের স্মৃতি আর শোকবার্তা শেয়ার করতে পারবেন। সিস্টেমে জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীর রিমাইন্ডার সেট করা আছে। মানুষ হিন্দী, গুজরাটি, ইংরাজী, মারাঠী, সংস্কৃত, মালয়ালম, তামিল, বাংলা আর কানাড়ি এমন দশটি ভারতীয় ভাষায় শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে পারবেন। আগামী তিনমাসের ভিতর তেলেগু, পাঞ্জাবী, অহমিয়া, বোরো, কনকানি, মণিপুরী, নেপালি, ওড়িয়া, সিন্ধী, সাঁওতালি, ডোগরি ভাষাতেও চলে আসবেন বিবেকরা।
নিউজ পেপারের এই ধরনের মৃত্যুবার্তা কলামের মার্কেট খুব ছড়ানো আর বিস্তৃত। প্রতি বছর প্রায় সাত মিলিয়ন মানুষ মারা যান। বিবেকের মতে মোটামুটি চারজনের ফ্যামিলি হলে প্রায় ২৮ মিলিয়ন মানুষ তাঁদের আপনজন হারিয়ে শোকার্ত হন। শ্রদ্ধাঞ্জলী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই শুধু নয়, আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, আফ্রিকা থেকেও কাস্টমার জোগাড় করেছেন। মৃত পূর্বপুরুষের মধুর স্মৃতি তাঁর উত্তর প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়াই এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।
সদিচ্ছা এবং সৌভাগ্য
বিবেকরা ‘Freemium’ মডেল ব্যবহার করেন। একজন কাস্টমারকে চার্জ করেন ৫,০০০ টাকা। কিন্তু শহীদ, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, ক্রীড়াবিদ অথবা রাজনীতিবিদদের প্রোফাইল সৌজন্যের খাতিরে নিখরচায় রাখা হয়। এই সাইটে এখনও অবধি চারশো মৃত্যুবার্তা কলাম আছে। বিবেকরা মাসিক ৬৫,০০০ থেকে ৮০,০০০ আয় করছেন। মাসে প্রায় ৯,০০০ করে নতুন ভিজিটর পাচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলী। এই জগতের নামজাদা খেলোয়াড় আমেরিকার Legacy.com আর tributes.com। স্থানীয় এলাকায় নিউজ পেপার, Tributes.in, obituaryindia.com এইসব প্রতিদ্বন্দ্বীরা তো রয়েইছে।
এক পয়সাও তাঁরা অ্যাড কিংবা মার্কেটিং এর জন্য খরচ করেননি। প্রচারের উদ্দেশ্যে গোটা টিম সোশাল মিডিয়া তোলপাড় করেছে। এর মধ্যে একশ ষাট বারেরও বেশি শ্রদ্ধাঞ্জলীর খবর বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত। তাঁরা ইতিমধ্যেই Limca Book of Records, India Book of Records এ নথিভুক্ত হয়েছেন। জয় করেছেন Manthan South West India Award, Big Business Plan by Espark-Viridian এবং the Real Diamond of Gujarat এর মতো অ্যাওয়ার্ড। নরেন্দ্র মোদি নিজে চিঠি লিখে বিবেকের কাছে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি অত্যন্ত আপ্লুত। রাজকোটের Trinity Unicepts Pvt. Ltd এর উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করেছে Shradhanjali.com বিবেক আর বিমল গুজরাট ছাড়া অনান্য রাজ্যেও নতুন তিন ধরনের সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান সহ ডানা মেলতে চান। ২০১৬-র মার্চে YourStory আয়োজিত language festival, Bhasha তে আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি শ্রদ্ধাঞ্জলীর টিমকে। প্রিয়জনের স্মৃতিচারণের মতো অপূর্ব একটি কাজ এতো সুন্দর ভঙ্গিমায় বিবেকরা করছেন যা আক্ষরিক অর্থেই 'তারিফ এ কাবিল'।