শঙ্খর 'CraftsNation' জাতে জাতীয়, তালে শিল্প
হস্তশিল্পীদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম 'CraftsNation'। কলকাতার এই স্টার্টআপ যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৪-র জানুয়ারিতে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সমঝদারদের কাছে যাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হস্তশিল্পীদের অসামান্য শিল্প পৌঁছে যায়।
২০১৪ থেকে ২০১৬-র যাত্রাপথে কম হার্ডেল পেরোননি এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শঙ্খ রায়। গান আর বইয়ের পোকা শঙ্খ। শুধুমাত্র প্যাশনের ডাকে HSBC, Larsen & Toubro-র মতো কর্পোরেট দুনিয়ায় এগারো বছরের চাকরি জীবনকে গুডবাই জানিয়েছেন। আর এই প্যাশনটাই হল CraftsNation এর genesis reason, শুধুমাত্র সফল উদ্যোগপতি হওয়ার তাগিদই যে শঙ্খকে তাড়িয়ে মেরেছে তাই নয়, ওঁর মগজে ঘুরপাক খেয়েছে আস্ত ভারত। আড়ে বহরে বিশাল এই দেশের দেশজ শিল্প, লৌকিক চিত্রকলা, আঞ্চলিক উপাখ্যান, অজস্র লোকগাঁথা শঙ্খকে দীর্ঘদিন মুগ্ধ করে রেখেছিল। চাইতেন এসব লৌকিক শিল্পগুলো বৃহত্তর বাজারে কদর পাক।
কিন্তু এই পথে বেশ কিছু কাঁটার সন্ধান পেয়েছেন তিনি। প্রধান অন্তরায় ছিল middleman। আখেরে লাভের গুড়টা ওরাই নিয়ে চলে যায়, যারা শিল্পী তাঁদের হাতে পরে থাকে শুধু পেন্সিল। এই বিচিত্র গণিতকেই বদলাতে চেয়েছিলেন শঙ্খ। শুরু করেন CraftsNation।
ওথেন্টিক ভারতীয় হস্তশিল্প সংগ্রহ করে তাকে বৃহত্তর বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করতেই শুরু করেন এই সংস্থা। ২০১৪ য় যখন শুরু করেন তখন ওঁর সংস্থাই ছিল হস্তশিল্প বিক্রির জন্য পূর্বভারতের একমাত্র ই-কমার্স সাইট। Drop shipping model এ কাজ করে CraftsNation। ৫ জন শিল্পীর তিনশটি প্রোডাক্ট নিয়ে শুরু হয়। আর আজ শঙ্খরা ১১৫ জন শিল্পীর হাতে তৈরি চার হাজারেরও বেশি রকমের প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন।
দুবছরে অনেক উত্থান পতন দেখেছে 'CraftsNation'। বুঝেছে যেকোনও মূল্যে স্টেক হোল্ডারদের ভরসা অর্জন করতে হবে। শিল্পীরাই তাদের ব্যবসার আসল মূলধন। তাই অবশ্যই যেন তাঁরা খুশি আর সন্তুষ্ট থাকেন সেদিকেও নজর দিয়েছে এই স্টার্টআপ। তবে অমূল্য শিল্পকে সঠিক দামে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়ার কাজটাই সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং।
সমস্যা মোকাবিলার প্রশ্নে শঙ্খ বললেন, যেকোনও স্টার্টআপেই সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাওয়া আসল চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও নাস্তানাবুদ হয়েছেন শিল্পীদের এই অনলাইন ব্যবসা পদ্ধতি বোঝাতে গিয়ে। দেশীয় শিল্পীরা প্রযুক্তিগত উন্নতি নিয়ে ততটা অবগত নন। এই ব্যবসায় আরও একটি মুশকিল দিক হল ভঙ্গুর সামগ্রী আনা নেওয়া করতে লজিস্টিক পার্টনার খুঁজে পাওয়া। টাকার জোগানও একটা বড় হার্ডেল। বিশেষত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, আরও উন্নত প্রযুক্তিকে প্রয়োগ করা, ব্যবসা বাড়ানো, প্রোডাক্ট রেঞ্জ বাড়ানোর মত হাজার একটা বিষয়ের জন্য ওদের আরও ফান্ড দরকার। তাই ওঁরা এখন সিরিজ এ ফান্ড তুলে আনতে কোমর বেঁধে নেমেছেন।
অল্পেতে খুশি নন শঙ্খ রায়। সাফল্য বলতে শঙ্খ বোঝেন একটাই, যেদিন দেশজ হস্তশিল্প বলতেই ক্রেতার মাথায় সবার আগে আসবে ওদের সংস্থার নাম। 'CraftsNation' এই নামটাই হয়ে উঠবে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড। আর এটা যে একদিনে হওয়ার নয় সেকথাও সম্যক জানেন এই তরুণ উদ্যোগপতি। বলছিলেন অ্যান্ত্রেপ্রেনিওরিয়াল জার্নিটা হল একটা রোলার কোস্টারে চড়ার মত। কখনও আকাশে উড়ছেন তো কখনও নেমে যাচ্ছেন গভীর অতলে। কিন্তু হলে কী হবে! যাদের জিনে প্যাশন আছে, এবং জীবনে লক্ষ্যটাও স্থির তারা ভীষণ উপভোগ করেন এই কঠিন এবরো খেবরো যাত্রা। এই বন্ধুর পথে হাঁটতে যদি বন্ধু পান ভালো, না পেলে কুছ পরোয়া নেই। কে কি বলল,কান দেবেন না। ধৈর্য আর প্যাশন থাকলে সাফল্য আসবেই।