আপনার সারপ্রাইজ পৌঁছে দেয় Outbox
বৃষ্টি ভেজা দুপুর। উতল হাওয়া। গনগনে আঁচে ফুটতে থাকা হৃদপিণ্ড যেদিন প্রথমবার বলেছিল ভালোবাসি সেটা ক্যালেন্ডারে গোলাপি স্কেচ পেন দিয়ে গোল কেটে রেখেছে মেয়েটি। সেদিন প্ৰথমবার ছেলেটি হাঁটু গেড়ে বসে এক তোড়া ফুল দিয়ে বলেছিল ‘কথা দিলাম’। চারপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। সাঁই সাঁই করে ছুটন্ত গাড়ি। সেসবের তোয়াক্কা না করে কালো পিচে হাঁটু গেড়ে ছেলেটি বলতে পেরেছিল। এসব দেখে শুনে প্রথমবার তাজ্জব হয়ে যাওয়ার দিনটি ক্যালেন্ডারে গোল করে দাগ কেটে রেখেছে মেয়েটি। খাতার পাতায় ওই তারিখ বহুবার লিখে, চার ধারে গোলাপ এঁকে, হৃদয় এঁকে তীর দিয়ে কাটাকুটি করেছে। কলেজ প্রেমের সেই স্মৃতি আজও মনে রেখেছে। বিষ্ময়মাখা এরকম দিনের স্মৃতিই উপহার দেয় প্রেমের শহর কলকাতার একটি স্টার্টআপ। প্রেমিকার জন্যে মাঝরাতে কোনও প্রেমিক তার নিজের লেখা আবেগের শব্দে গেঁথে দেন গান। আর সেই গান তাঁর কান পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এই স্টার্টআপের মিউজিকাল টিম। রীতিমত মাঝরাতে গিটার, স্যাক্সোফোন বাজিয়ে চিৎকার করে বলে আসে ছেলেটা তোমায় ভালোবাসে। “...বেলা বোস তুমি পাচ্ছ কি শুনতে...”
কী বা দিন! কী বা রাত্রি! অর্ডার পেলেই মাঝরাতেও আস্ত আইসক্রিম ভ্যান নিয়ে বার্থডে উইশ করতে পৌঁছে যান ওরা। কলকাতার যেকোনও ঠিকানায়। কিংবা একগাদা অপরিচিত মানুষের ভিড়েই আপনার জন্যে আচমকা গেয়ে উঠতে পারেন এমন কোনও গানের কলি যা হয়তো ছিল আপনার নিতান্ত ব্যক্তিগত। আপনি চমকে ওঠেন। এরকম সারপ্রাইজ দেওয়াটাই ওদের কাজ। আপনাকে চমকে দিয়ে খুশিতে ভরিয়ে দেওয়ার কাজটাই করেন ওরা। ওদের স্টার্টআপের নাম আউটবক্স।
মাত্র চব্বিশ পঁচিশ বছরের আবেগ প্রবণ ছেলেটা কৌশল মোদি। কলকাতার স্টার্টআপ কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত নাম। পড়াশুনো ডন বস্কোয় তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স। কলেজেই আলাপ মহাদেবী বিড়লার ছাত্রী সুকৃতি অগরওয়ালের সঙ্গে। দুজনেই ব্যবসায়ী পরিবারে ছেলেমেয়ে। কিন্তু দুজনেই চেয়েছিলেন বাবার ব্যবসা নয় নিজেরা অন্য কিছু করবেন। একদম অন্যরকম। যা হবে তাঁদের পরিচয়। সুকৃতি বলছিলেন ওর মা ফ্যাশন ডিজাইনার। বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। দাদার অন্য ব্যবসা। মা-ই ওকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন। সেই প্রেরণাই ওকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে। প্রাণবন্ত সুকৃতি বলছিলেন, কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের মধ্যে গিফট দেওয়া নেওয়া চলতেই থাকত। গিফট তো সবাই দেয় কিন্তু কীভাবে সেটা প্রেজেন্ট করা হচ্ছে সে কথা কেউ তলিয়ে ভাবে না। ওরা সেটাই ভাবতে শুরু করেন তখন থেকে। ২০১৪ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সুকৃতি আর কৌশল শুরু করে দিলেন এই উপহার দেওয়ার ব্যবসা। শুধু জিনিসটা উপহার হিসেবে দেওয়া নয়, একটি অসামান্য অভিজ্ঞতাই উপহার দেন ওরা। সারপ্রাইজের জন্যে সিকোয়েন্স তৈরি করেন। কখনও মিউজিকের সাহায্য নেন, কখনও আবার নাটকের। প্রথম প্রথম কেক, গ্রিটিংস কার্ড, বিয়ের কার্ড, ফুলের তোড়া উপহার দেওয়ার কাজটাই ওরা করতেন। কিন্তু দিনে দিনে ক্লায়েন্টের চাহিদা মত নানান ধরনের সারপ্রাইজ নিয়ে আসেন।
কলকাতায় কেন, ভূভারতে এমন কাজ কেউ করে না। একবার তো কলকাতাতেই ক্লায়েন্টের প্রেম নিবেদনের জন্যে হেলিকপ্টারের সিকোয়েন্স তৈরি করিয়েছিলেন কৌশল। শহরের রানির আকাশে রীতিমত চপারে চড়ে রোম্যান্টিক গান শুনে একে অপরকে প্রেম নিবেদন করেছেন কৌশলদের ক্লায়েন্ট। আশ্চর্য উপহারের তালিকায় রয়েছে আরও অনেক কিছু। এমনিতে সান্টা সেজে ক্রিস্টমাসের গিফট বিলি করা তো ট্র্যাডিশনাল সারপ্রাইজ। এগুলো ওরা করেন ঠিকই কিন্তু সব থেকে বেশি করেন যা কেউ কখনও ভাবেনি এমন সব সারপ্রাইজ গিফটের কাজ। যেমন ধরুন আপনার প্রিয়জনকে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দিতে চান। আপনি যোগাযোগ করতে পারেন আউটবক্স টিমের সঙ্গে। 080 3047 4129 এই নম্বরে ফোন করতে পারেন। আপনার ইচ্ছের কথাটা শুধু জানান। বাকিটা ওরা করে দেবেন। আপনার সারপ্রাইজের প্লট সাজাবেন ওরাই। ইনোভেশন চাইলে সেটাও জুড়ে দেবেন। গিফট তো থাকবেই কিন্তু তার থেকেও বেশি থাকবে অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা। আপনার প্রিয়জনের স্মৃতিতে যা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। সারপ্রাইজের রেট চার্ট আছে। বিভিন্ন জিনিসের জন্যে বিভিন্ন রকম খরচ। তবে মাত্র পাঁচশ টাকা থেকে শুরু। ঊর্ধ্ব সীমার কোনও অন্ত নেই। পুরোটাই নির্ভর করবে সারপ্রাইজের আনুষঙ্গিক খরচের ওপর।
কৌশল বলছিলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৭ বুটস্ট্র্যাপিংয়ের এই কটা বছরে ওরা রীতিমত সাফল্য পেয়েছেন। কলকাতায় ওদের নিশ ক্লায়েন্টেল আছে। কেউ একবার ওদের পরিষেবা নিলে বারংবার ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফলে ক্লায়েন্টরা খুশি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসাও বেড়েছে উল্লেখজনক গতিতে। পরিবারের কাছ থেকে প্রাথমিক সাহায্য পেলেও সেভাবে কোনও বিনিয়োগ খোঁজেননি কৌশলরা। এ ক'বছরে ফান্ডিঙয়ের কথা মাথায় আসেনি। কিন্তু এবার ওরা ব্যবসা বাড়াতে চাইছেন। এবার ফান্ডিং খুঁজতে শুরু করেছেন কৌশল সুকৃতিরা। কারণ কলকাতার পর ওরা চাইছেন অন্য শহরেও খুশির সারপ্রাইজ পৌঁছক। বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, দিল্লিতেও তাই ছড়িয়ে পড়তে চায় আউটবক্স। তাদের ক্লায়েন্ট আছে এই সব শহরে। এই সব শহর থেকে ফোন আসে কলকাতার বাড়িতে মাকে বাবাকে সারপ্রাইজ পাঠানোর।
আক্ষরিক অর্থেই মাদার্স ডে, ফাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে রীতিমত হিমশিম খাওয়ার উপক্রম হয়। প্ৰথম প্রথম ওরা মাত্র দুজন ছিলেন। এখন দল বেড়ে ১৬ জনের একটা টিম। কলকাতার এমাথা ওমাথা সারাদিন চরকি কাটছে টিম আউটবক্স। অতি সন্তর্পণে আপনার জন্যেই হয়তো তৈরি হচ্ছে একটি সারপ্রাইজ। কলিং বেল বাজলো বলে, জানেন তো ওরা আনন্দটা যেকোনও সময় ডেলিভারি করে দেন।